কানাইঘাট: সিলেটের কানাইঘাট দীঘিরপার ইউপির ৫নং ওয়ার্ডের বর্তমান ইউপি সদস্য এলাকার আলোচিত কয়ছর আহমদ কর্তৃক দশম শ্রেণিতে পড়ুয়া অপ্রাপ্ত বয়স্ক এক ছাত্রীকে ফিল্মি স্টাইলে তোলে নিয়ে বাল্য বিবাহের ঘটনায় এলাকায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।
এ ঘটনায় উপজেলার ১নং লক্ষীপ্রসাদ পূর্ব ইউপির ভাটিবারাপৈত গ্রামের মৃত হাফিজ মহসিনের ছেলে ইউপি সদস্য কয়ছর আহমদের হোটেল ম্যানেজার ওই ছাত্রীর ভাই জুবায়ের আহমদ (২৫) বাদী হয়ে গত বুধবার কানাইঘাট থানায় বাল্য বিবাহের হুতা ইউপি সদস্য কয়ছর আহমদসহ তার ৫ সহযোগির বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, স্থানীয় সড়কের বাজারস্থ কাজিরগ্রামের মৃত আজির উদ্দিনের ছেলে ইউপি সদস্য কয়ছর আহমদের মালিকানাধীন নিউ পানশী রেস্টুরেন্টের ম্যানেজার জুবায়ের আহমদ সম্প্রতি বিয়ে করলে তার বাড়ী ভাটিবারাপৈত গ্রামে বিয়ের অনুষ্ঠানে ইউপি সদস্য কয়ছর আহমদ যান। সেখানে যাওয়ার পর স্থানীয় সড়কের বাজার আহমদিয়া মাদ্রাসার দশম শ্রেণির ছাত্রী জুবায়ের আহমদের বোন ১৬ বছরের জান্নাতুল বুশরা’র উপর লোলুপ দৃষ্টি পড়ে বিবাহিত ও ৪ সন্তানের জনক ইউপি সদস্য কয়ছর আহমদের। এরপর থেকে জুবায়ের আহমদকে তার মাদ্রাসা পড়ুয়া অপ্রাপ্ত বয়স্ক বোনকে তার সাথে বিয়ে দেওয়ার জন্য এলাকার প্রভাবশালী কয়ছর মেম্বার নানাভাবে চাপ সৃষ্টি করেন। এতে জুবায়ের তার আত্মীয়-স্বজন তার বোনের সাথে এ ব্যাপারে কথা বলবে বলে জানায়।
গত ১১ এপ্রিল পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী দুপুর ১২টার দিকে কয়ছর মেম্বার তার হোটেল ম্যানেজার জুবায়ের আহমদকে স্ত্রী সহ তার বোনকে তার এক সহযোগি জুলাই গ্রামের জসিম উদ্দিনের শ্বশুর বাড়ী জকিগঞ্জ উপজেলার একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে দাওয়াত দেয়। একপর্যায়ে কয়ছর মেম্বার তার সহযোগিদের নিয়ে জুবায়ের আহমদকে সড়কের বাজারস্থ বাসায় আটকের পর মারধর করে বলে ‘তোর স্ত্রীকে বল তোর বোনকে নিয়ে বাড়ী থেকে বিয়ের উদ্দেশ্যে বের হওয়ার জন্য। তা না হলে তোকে এখানে মেরে ফেলবো।’ তখন জুবায়ের ফোন দিয়ে তার স্ত্রী ও মাদ্রাসা পড়ুয়া বোনকে বিয়েতে যাওয়ার জন্য সড়কের বাজারে সিএনজি গাড়ীযোগে আসার কথা বলে। একপর্যায়ে জুবায়ের আহমদের স্ত্রী মনি আক্তার ও তার বোন জান্নাতুল বুশরা অটোরিকশাযোগে জকিগঞ্জ সড়কের ঠাকুরেরমাটি গ্রামের শোয়েব ডাক্তারের বাড়ীর পাশে আসা মাত্রই কয়ছর মেম্বার ও তার সহযোগিরা তাদেরকে সিএনজি থেকে নামিয়ে একটি নোহা গাড়ীতে তোলে জুবায়ের আহমদ ও তার স্ত্রী এবং বোনকে জকিগঞ্জ উপজেলার অজ্ঞাত একটি বাড়ীতে নিয়ে যায়। সেখানে ধারালো অস্ত্র দিয়ে নানা ধরনের ভয়ভীতি সৃষ্টি করে আগে থেকে সেই বাড়ীতে অবস্থানরত সিলেট শহর থেকে পরিচয়হীন একজন কাজীকে এনে জোরপূর্বক অপ্রাপ্ত বয়স্কা মাদরাসা ছাত্রী জানাতুল বুশরাকে ৩ লক্ষ টাকা দেন মোহর ধার্য্য করে বাল্য বিবাহ করে ইউপি সদস্য কয়ছর আহমদ। সেই কাবিননামায় জোরপূর্বকভাবে সে জুবায়ের ও তার স্ত্রী মনি আক্তারের স্বাক্ষর নিয়ে তাদের ৩ জনকে ছেড়ে দেয়। দুই দিনের মধ্যে জান্নাতুল বুশরাকে কয়ছর মেম্বার তার বাড়ীতে তোলে দেওয়ার জন্য তার ভাই জুবায়ের আহমদকে বলে।
বাড়ীতে এসে জুবায়ের আহমদ ও তার স্ত্রী ও বাল্য বিবাহের শিকার জান্নাতুল বুশরা তাদের আত্মীয়-স্বজনদের কাছে ঘটনা খোলে বললে উল্লেখিত অভিযোগসহ কয়ছর মেম্বারের বিরুদ্ধে আরো বেশ কিছু গুরুতর অভিযোগ এনে থানায় দরখাস্ত মামলা দায়ের করেন জুবায়ের আহমদ।
এছাড়া বাল্যবিবাহের শিকার দশম শ্রেণির ছাত্রী জান্নাতুল বুশরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে নির্বাহী কর্মকর্তা বারিউল করিম খানের কাছে জোরপূর্বকভাবে তার ভাইকে জিম্মি করে ৪ সন্তানের জনক বিবাহিত কয়ছর মেম্বার কর্তৃক বাল্যবিবাহের ঘটনাটি অবহিত করলে তিনি এব্যাপারে থানায় অভিযোগ দিতে বলেন।
অভিযোগের তদন্তকারী কর্মকর্তা থানার এসআই স্বপন চন্দ্র সরকার জানিয়েছেন, কয়ছর মেম্বারের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত অভিযোগটি তদন্তাধীন অবস্থায় রয়েছে।
অভিযোগের বাদী জুবায়ের আহমদ বলেন, ‘কয়ছর মেম্বার এমন কোন কাজ নেই যে সে করতে পারে না। এলাকার কেউ তার অন্যায় কর্মকান্ডের প্রতিবাদ করতে ভয় পায়। পূর্বে সে অনেককে তার বাসায় আটক রেখে নির্যাতন করেছে। একটি নির্যাতনের ঘটনায় পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়ে জেলও খেটেছে সে। আমি কয়েক মাস পূর্বে সৌদি আরবে যাব বললে সে আমার পাসপোর্ট তার কাছে নিয়ে জব্দ করে আমাকে তার বাসায় হাত-পা বেঁধে দুই দিন জিম্মি করে রাখে এবং আমার কাছে ১৩ লক্ষ টাকা পাবে মিথ্যা অভিযোগ এনে আমার চাচা আব্দুল মতিনকে তার বাসায় ডেকে এনে কয়েকটি স্টাম্পে স্বাক্ষর নেয়। সে খুবই দুর্দান্ত প্রভাবশালী হওয়ায় তার অপকর্মের প্রতিবাদ করতে পারিনি। ৭ মাস থেকে তার হোটেলে বিনা বেতনে আমি চাকরি করছি। শেষ পর্যন্ত আমাকে জিম্মি করে আমার বোনকে তোলে নিয়ে সে জোরপূর্বকভাবে বাল্য বিবাহ করেছে।’
বাল্য বিবাহের শিকার জান্নাতুল বুশরা বারবার কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে বলে, ‘আমি লেখা পড়া করে চাকরি করতে চাই। আমার বাবা মা নেই। আত্মীয়-স্বজনরা আমি সহ ভাই জুবায়ের আহমদকে লালন পালন করে থাকেন। কয়ছর মেম্বার আমার ভাইকে জিম্মি করে আমাকে ইচ্ছার বিরুদ্ধে বাল্যবিবাহ করেছে। মরে গেলেও আমি তার সংসার করব না। আমি পড়তে চাই এবং অত্যন্ত খারাপ প্রকৃতির কয়ছর মেম্বারের হাত থেকে বাঁচতে চাই। তার বিরুদ্ধে যেন থানা পুলিশ কঠোর আইনানুগ পদক্ষেপ নেয়, যাতে করে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা কেউ ঘটাতে না পারে।’
এ ব্যাপারে ৩নং দিঘীরপাড় ইউপি চেয়ারম্যান আলী হোসেন কাজলের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমার পরিষদের ৫নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য কয়ছর একটি অপ্রাপ্ত বয়স্ক মাদ্রাসা পড়ুয়া ছাত্রীকে জোরপূর্বক বাল্যবিবাহ করেছে বলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বারিউল করিম খান ও ভিকটিমের পরিবার অবহিত করেছেন। কিন্তু এ ব্যাপারে ইউপি সদস্য কয়ছর আহমদ কিছুই জানায় নি। জেনেছি বিষয়টি নিয়ে থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে ইউপি সদস্য কয়ছর আহমদের সাথে বারবার যোগাযোগ করা হলেও তার মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়। তার এক স্বজন জানান সে জান্নাতুল বুশরাকে বিয়ে করেছে জেনেছেন, সেটি বাল্য বিবাহ ও ইচ্ছার বিরুদ্ধে করা হয়েছে কি না এ ব্যাপারে তিনি জানেন না।